Cineমেনু #২ — La Collectionneuse (The Collector)

WhatsOddNWhatsNod
9 min readFeb 23, 2021

দ্বিতীয় পাতে এটা কী বা এটা কেন প্রশ্ন করলে তার উত্তরে গোল্লা গোল্লা চোখ আর তাচ্ছিল্যের কাঁধ ঝাঁকানি ছাড়া কিছুই দিতে পারব না।

ঘটনা খুব পরিষ্কার।
সন্দুরের টানে।
সুন্দরীর টানে শুধু না।

ইনস্টাগ্রাম একটা বুজরুকি জায়গা আমি জানি। কিন্তু বুজরুকির মধ্যেও কিছু কিছু গোবরে পদ্মফুল টাইপের জিনিস পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটা — সিনেমা বিষয়ক কিছু পেজ। বিষেশ করে বলতে গেলে @cinemamonamourpage। এখানে ওই আগের প্যারাতে যেটা বললাম, ওই সুন্দরকে পাওয়া যায়। সুন্দর ফ্রেম, সুন্দর মুহূর্ত, সুন্দর সময়, সুন্দর মানুষ, সুন্দর মানুষী এই সব আর কি। তাহ বেশ কিছুদিন আগে যখন এক্কেবারে ল্যাজে গোবরে ছিলাম জীবন নিয়ে, তখন সেই ল্যাগব্যাগে সময়ে চোখে পড়ে যায় এই সিনেমার একটা ফ্রেম। সবুজ সোয়েটার পড়া একটা মিষ্টি মেয়ে অতিরিক্ত-মন-পাঁজর-কলজে-মজ্জা-পর্যন্ত-গলিয়ে-দেওয়া মিষ্টি হাসি হাসছে। আর তার থেকেও চোখে পড়ার মত সেই ফ্রেমের নরম আলো। আমি ভেবে রাখলাম এরকম আলোতেই প্রেম করব এরকম একজনের সাথে টাইম মেশিনে আগের যৌবনে ফিরে গিয়ে।

এরকম আলো মাখা প্রেম আগেও হয়েছে সিনেমা দেখে। বহুদিন আগে এমেলি তো এরকমই নরম আলো! সেটা অবশ্য কলেজে পড়ার সময় দেখা। আরেকবার দেখে নিতে হবে!

আর এই পেজ থেকেই সেই অদূর গোপালকৃষ্ণনের একটা সিনেমার খোঁজ পেয়ে দেখেছিলাম। অনন্তরাম। সেখানে শোভানাকে দেখেও এই হাঁটু কাঁপাকাপি শুরু হয়েছিল। মনে হয়েছিল আহা! এরকম একজনকেই চাই যে এক হাসিতে পুরো ফুসফুস থেকে বিরক্তি আর হেরে যাওয়াগুলো থেকে বিরামহীন ক্লান্তি এক নিমেষে সরিয়ে দেবে। ওরোম সুন্দর হাসি, ওরোম সুন্দর ঠোঁট, ওরোম সুন্দর তাকানো… আর সব সেই ফেলে আসা পুরোনো আলোতে।

যাক সবুজ সোয়েটার, নরম বিকেল আলো… সেই সব ভেবে পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আর সিনেমার কথা বেমালুম ভুলে মেরে দিলাম।

তারপর একদিন ঘটা করে সিনেমেনুর আয়োজন হতে সেই সব জমিয়ে রাখা না-দেখা সিনেমাগুলো এক এক করে ঝেড়ে মুছে লিস্টে রাখলাম। তবে কি, এটা ছিল পাঁচ নম্বরে। হঠাৎ দু নম্বরে উঠে এলো কেন? আসলে হয়েছে কি, দিনটা ছিল রবিবার। আমার মন আর জিভ মাংস মাংস করছিল। দুপুরে বাড়ির তেঁতুল দেওয়া সোল মাছের ঝোলে আমার soul-এরও অরুচি হয়ে গেছিল। সন্ধ্যে হতে বেশ করে একটা জয়েন্ট এফোর্টে অনেক হাঁটা হাঁটি করে খিদে বাড়িয়ে নেওয়া হল। তারপর সেই দোকানে ঢুকে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা মিডিয়াম রেয়ার টেন্ডারলয়েন তো অর্ডার দেওয়া হল। তার সাথে ‘এমনি দেখি কেমন খেতে’ বলে যেটা দেওয়া হল… পর্ক কাবাব। খেয়ে মনে হল এ এক অন্য স্বর্গ। এখানে মাংস নরম হয়ে গলে গলে আমার গলা বেয়ে নামছে। দেশে যেন কোনো দুখ নাই। পেট্রোলের দাম একশো ছুঁয়ে যায়নি। কৃষকের দাবি দাওয়া যেন মিটে গিয়ে আন্দোলন উঠে গেছে। একুশে পা দেওয়া মানুষের মত বাকিদেরও যেন আর দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে না, সব্বাইকে জেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এরকম স্যাডিস্ট ডিনায়াল হয়েছিল। সব ভালো — সবাই ভালো, ভাবতে ইচ্ছে করছিল। জয়েন্টলি বন্ধুত্বের সাথে পর্ক কাবাব মিলিয়ে সেই মন নিয়ে যখন বাড়ি ঢুকলাম তখনও সেই রেশ কাটেনি।

মেনুতে ছিল মেঘে ঢাকা তারা। কিন্তু মন চাইলো না তারা ঢাকতে। মনে হলো আজ ওই, ওই গানটার মত মনে হচ্ছে,

‘অনেকটা চলে আসা হয়ে গেল এ আলোতে,
এখন বিকেল চারপাশ।
রোদ খুব ম্রিয়মাণ, তবুও তো লেগে আছে,
মেঘহীন শান্ত আকাশ।’

এই বলে শুরু হয়ে গেল তাহলে দ্বিতীয় পাতের খাওয়া। এটাও নাকি ফরাসি নতুন ঢেউ। এই ঢেউ দেখে বোঝা যায়। আমি সেই ঢেউ মৃনাল সেনের পদাতিক বা ইন্টারভিউ দেখে পেয়েছিলাম। আসলে কিছুই না ওই এক রকম ইউটিউব গোত্রীয় এডিটিং। একটা ঝকঝকে ঢেউ খেলানো যৌবনের মত হঠাৎ করে সামনে এসে যায় জিনিসগুলো, লেখাগুলো। আর বলার দরকার নেই আলাদা করে যে এই রাঁধুনির রান্না আমার আগে খাওয়া হয়নি।

সিনেমার শুরু থেকে শেষ অব্দি এড্রিয়ানকে দিয়ে যে কথাগুলো বলিয়ে দেওয়া হবে সেগুলো শুনে প্রশ্ন জগতে বাধ্য যে এটাই কি সত্যি এরিকের নিজের কথা বাকি পুরোটাই এই একটা সুপুরুষ নিজের মনের কথা বলে দিচ্ছে? এড্রিয়ানকে ফাটাফাটি দেখতে। তার এক প্রেমিকা আছে। আর আছে প্রেমিকার বন্ধু। এই বন্ধুকে দিয়ে আবার সুন্দর আর কুৎসিত নিয়ে অনেক কথা বলে দেওয়া। বন্ধুটি বলে যে সে যদি সামনে একজন কুৎসিত মানুষের মুখোমুখি হয়, তার সাথে প্রেম তো বহু দূর, বন্ধুত্বই করবে না। সেখানে সুন্দর দেখতে হলে কিছুটা হলেও চলতে পারে। এটা তো নতুন করে বলার কিছু নেই! শুধু সিনেমাতে দেখলেই অন্যায় আর রোজকার জীবনে দেখলে সেটাই ঠিক?

আমি একটা আর্টিকল পড়ছিলাম। এরা মানে ফেমিনিজম ইন ইন্ডিয়া, বৈষম্য নিয়ে বেশ ভালো কাজ করে, লেখা পত্তর বের করে। কিন্তু তার সাথে সাথেই মাঝে মধ্যে এমন কিছু মানুষ তাদের কলম দিয়ে এমন কিছু লিখে দেয় যে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। একজন লিখেছে বিসর্জন সিনেমাটা নিয়ে। তার আপত্তি যে কৌশিক গাঙ্গুলীর চরিত্রটা দেখতে কুৎসিত বলেই জয়া এহসান নাকি তাকে খেদিয়ে দিয়েছে। ঘরে সুপুরুষ আবির চ্যাটার্জির সাথেই প্রেম করে শেষে। তার আপত্তি এটাই যে সিনেমাতে নাকি এটা ভুল দেখানো হয়েছে। তার মত এই কৌশিক গাঙ্গুলীর জায়গায় শাহরুখ খানের মতো কেও একই রকম গা ঘিনঘিনে স্টক করে গেলে তাকে এক ছুটে জয়া গিয়ে কাছে টেনে নিত। এখানে সহজ ব্যাপার আছে। প্রথমত এটা সিনেমা। গল্পে শাহরুখ থাকলে কী হত, ডাইনোসর থাকলে কী হত এগুলোর শেষ নেই। আর দ্বিতীয়ত, আমি দুটো অপশন যদি রাখি একজনের সামনে- এক দিকে, তার বাপের বয়সী একজন মোটা, কুৎসিত, কালো, এক-চোখ-খারাপ লোক যে কিনা একদম প্রেমে পাগল — সব সময় নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে দিচ্ছে মেয়েটির পায়ে। মোদ্দা কথা, খুব সহজেই অনেকটা অনেকটা করে পাত্তা দিচ্ছে। আর ঠিক উল্টো দিকে, তার সমবয়সী একজন দারুন হ্যান্ডসাম, ফস্সা, টানটান শরীরওলা আর চোখওলা ছেলে, যে কিনা তাকে বলতে গেলে পাত্তাই দিচ্ছে না। কাকে বেছে নেবে? সহজলভ্য কুৎসিত নাকি খেটে-পেতে-হবে সেরকম hard-to-get সুন্দর?

যেটা গোদা সত্যি সেটাই যে হওয়া উচিত সেরকম তো নয়। কিন্তু সেটাই তো হয় বাবু!

ওপারের আন্দোলনের চাপে পরে তোরা ফস্সা করার ক্রিমকে চকমকি ক্রিম বললেই তো আর কালোকে কালুয়া, কেলটে, শ্যামলা, একটু চাপা বলা থেমে যাবে না? এমন কি, সব থেকে নামকরা কালো মানুষ, কৃষ্ণ, তাকেও তো তোরা সব সময় স্থির বা চলমান ছবিতে টুকটুকে ফস্সাই দেখবি। যীশুকেও তোরা টুকটুকে ইউরোপিয়ান শরীরে দেখবি।

কাজের কথা হল যে বয়সটাও আসল নয়। কৌশিক গাঙ্গুলীর জায়গায় মিলিন্দ সোমানকে এনে দিলে অন্য কিছু হতেই পারতো। সেভাবে বলতে কোনোটাই একমাত্র ক্রাইটেরিয়া নয়। সবটা নিয়ে একটা ইয়ে হয়। কিন্তু একদম শুরুতে যেটা দেখেই ইয়েটা হয় সেটা অবশ্যই সৌন্দর্য্য। বা ঠিক করে বলতে গেলে সেটার পপুলার ধারণা।

যাক, এই কালেক্টর সিনেমাটা শুধু যদি কেও অয়েল পেন্টিংয়ের মত ঝলমলে সুন্দর ফ্রেমিংয়ের জন্য দেখতে যায়, সেটাও পারবে। সেই হলদেটে একটা ভাব যেন ভোরবেলার স্বপ্ন! যেটা মাঝখানে থেমে গেলে মনের জোর দিয়ে চোখ টিপে শুয়ে শুয়ে বাকিটা বানিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে নিজের মত করে।

এই এড্রিয়ানে এবার ফিরে আসা হোক। এই লোকটির যে প্রেমিকা, সে থাকতে চায় লন্ডনে আর এই শিল্পী মানুষ সব কিছু কাটিয়ে দিয়ে শুধু শান্তির জন্য থেকে যেতে চায় সমুদ্রের কাছাকাছি। যথারীতি তাই দুজন দুদিকে চলে যায়। সমুদ্রের কাছেই একটা বাড়িতে থেকে যায় এড্রিয়ান। সেখানে ড্যানিয়েল বলে একজন আপাতত আছে। আর একজন যাকে দেখেই সেই হাটু কাঁপাকাপি- হেইডি। হেইডি এই দুই পুরুষের তুলনায় অনেকটাই ছোট। সে এসেছে যে বাড়ির মালিক তার কাছে। কিন্তু বাড়ির মালিক মানে রুডল্ফ বাইরে গেছে।

ড্যানিয়েল একটু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষ। খুব বেশি চাপ নেই। এড্রিয়ান একদম জেদ করে কিছুই করবে না বলে ঠিক করেছে। বই পড়ছে, একা একা সমুদ্রে সাঁতার কেটে আসছে, নেশা করছে, গান শুনছে। মানে যে ধরণের জিনিস সেই সময়ের মানুষ ভাবতে পারে না। আর আমরা এখন যে সময়ে আছি সেই সময়ে এটা তো ভাবাই পাপ। গতকাল অবিশ্যি আমি এরকম একটা জিনিসের খোঁজ পেলাম। বিপশ্যনা মেডিটেশিন বলে এক জিনিস হয়। দশ দিনের ফ্রি কোর্স। বাংলায় শুধু পানিহাটিতে হয়। মোবাইল নেই, কথা নেই, টিভি নেই, বই নেই, মাংস ডিম মাছ সেক্স কিচ্ছু নেই। রোজ দশ ঘন্টা শুধুই মেডিটেশন। বাবা রে! এভাবে দশ দিন। থাকা খাওয়া ফ্রি। বিলাস, পয়সা দিয়েও পাওয়া যাবে না।

যাক আর হেইডি? সে ঝলমলে যৌবন নিয়ে সুখে আছে। ড্যানিয়েল আর এড্রিয়ান যা যা করছে সেই সব কিছু তো করছেই তার সাথে সেক্স ফ্রি। তার ঘরে তার প্রেমিক গোছের একজন থাকে। প্রতি রাতে তাদের ঘর থেকে এতো আওয়াজ আসে যে এড্রিয়ান মুনি জানিয়ে দেয় যে ছেলেটির আর থাকা চলবে না। থাকলে তার শান্তি ভঙ্গ হচ্ছে। এই শুনে ছেলেটি কেটে পরে। হেইডি আর দুজন মিলে দিব্যি থাকে।

সিনেমা যত এগোয়, এড্রিয়ান তত উঠোন বাঁকা বলে লাফাতে থাকে। তুই গাছের ছায়ায় বসে বই পড়, নিজের ইচ্ছে মত সাঁতার কেটে আয়। তাহ নয়! হেইডি কে নিয়েই পরে আছে। শুরুতে শুরুতে বলছে, হুহ! এর মত মেয়ে ঢের দেখেছি। আমি কাছেই ঘেঁষতে দেব না। আমি তো চাইলেই ছুঁতে পারি কিন্তু আমি নীতির মেডেল পড়ে আছি তাই বন্ধু হব ব্যাস। তাই হেইডি কে নিয়ে যাবে সমুদ্রের ধারে। জামা প্যান্ট খুলতে সাহায্য করে দেবে। সাঁতার কাটবে আর থেকে থেকে দেখবে হেইডি কী ভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে একদম সেই ভেতর গলিয়ে দেওয়া হাসি হাসবে। এই সব চলতে থাকে। কিছু পরে ড্যানিয়েলকে গিয়ে বলে এই মেয়েটা আমায় লাইন মারছে দেখ! এক কাজ কর না তুই ওকে নিয়ে নে। যেন হেইডি ওর কানে কানে বলে এসেছে যে ওর কাওকে লাগবেই! আসলে এড্রিয়ান দেখছে নতুন নতুন ছেলে হেইডিকে গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছে, রাত কাটাচ্ছে আর পরের দিন পৌঁছে দিচ্ছে। এইসব দেখে এড্রিয়ান তো স্বাভাবিক ভাবেই না-পাওয়ায় দাউ দাউ!

এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে যায়। ড্যানিয়েল সত্যি সত্যি হেইডি কে নিয়ে শুয়ে পরে। ফরাসিরা মনে হয় অন্য লোকের সুরসুরির জন্য দরজা খুলেই রাখে। বা হয়তো ওদের কিছু যায় আসে না। যাক এর পরেই এড্রিয়ান অন্য রকম হয়ে যায়। একদম সাদা মাটা। হিংসুটে। ইগোর পাহাড়। যে নাকি এখানে এসে কিছুদিন নিজের মত কিছু না করে কাটাবে ভেবেছিল, সেই কিনা হেইডিকে পেয়ে চুমা দিতে যায়। হেইডি ওকে কাটিয়ে দিয়ে ড্যানিয়েলের কাছে চলে যায়। এতক্ষনে শিল্পী এড্রিয়ানের সব ধ্যান ভঙ্গ হয়ে গেছে।

তার পরে গল্পটা যে দিকে যায়, সেটাকে সহজে হজম করা কঠিন হয়ে পরে। ড্যানিয়েল আর এড্রিয়ান মিলে হেইডিকে হ্যাটা করতে থাকে। এই হ্যাটা করার সিন থেকেই ওই ইনস্টাগ্রামের ছবি। ওরা হেইডিকে এতো পুরুষের সাথে সম্পর্কে গেছে বলে কালেক্টর বলে। সেই থেকেই সিনেমার নাম! বোঝো! এখানে আমার দর্শক হয়ে নীতি পুলিশ হওয়ার মানে হয় না কোনো, কিন্তু দুটো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের তাদের থেকে অনেকটাই ছোট মেয়ের সঙ্গী বাছাই নিয়ে এতটা জ্বালাপোড়া কেন সেটা বুঝতে পারিনি। ওহ এড্রিয়ান কে হেলায় সরিয়ে দিয়েছে বলে? এড্রিয়ানের সব সময় মনে হচ্ছে, হেইডি যাই করুক, সব এড্রিয়ানকে দেখিয়েই করছে! আমাদের এখানে দাদাদের না করে দিলে দাদারা জলের লাইনে বিষ মিশিয়ে দেয়। কিন্তু এড্রিয়ান দাদা সেই অব্দি নামতে পারেনি। যেটা পেরেছে হল হেইডিকে কাজে লাগিয়ে সত্যি একজন কোলেক্টরকে হাতে রাখা।

হেইডি যেই কোলেক্টরের বাড়িতে রাতে থাকে, এড্রিয়ান খালি ভাবে ওকে জব্দ করার জন্যই হেইডি এমন করছে। হেইডির গোটা চিন্তার জমিতে আস্ত মন্দির হয়ে বসে আছে এড্রিয়ান, এরকমই কিছু একটা ধারণা এড্রিয়ানের। আর তাই তার শুরুর দিকের ওই কিছু করব না, মানুষের থেকে দূরে থাকব, সেই সব ভাওতা ভেঙে গেলে, এড্রিয়ান দিব্যি শহর ঘুরে আসে নিজেই নিজের মান ভাঙাতে।

হেইডিকে আমিও ঠিক বুঝতে পেরেছি এমনটাও না। তবে মেয়েটা একটা অন্য রকম। জীবন্ত ভীষণ। পুরো জীবনটা নিজের তালে তালে গুছিয়ে নিতে পারে। বুড়ো কালেক্টর হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে দিতে গেলে, সে দিব্যি সরে গিয়ে একদমই স্বাভাবিক ভাবে হাসতে হাসতে কোলেক্টরের কেনা দামি ফুলদানি একটু ঠেলা মেরেই ভেঙে দেয়। কোলেক্টর কিছুই বলতে পারে না কারণ তার মনে হতে থাকে যে আগের রাতে না হোক, এই রাতে হয়তো… এই সব দেখে এড্রিয়ান হেইডিকে নিয়ে সেই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে গাড়িতে রওনা দেয়। তারপর শেষটা অদ্ভুত।

রাস্তায় অন্য একটা গাড়িতে হেইডিকে ডাকে। হেইডিকে অন্য এক পার্টিতে নিয়ে যাবে বলে। হেইডি না করে দেয়। হেইডি ওদের ফোন নম্বর লেখার জন্য এড্রিয়ানের গাড়ি থেকে নামে। আমাদের মনে হয়, এই তো! এটাই তো এড্রিয়ান চেয়েছিল! হেইডি ওর সাথেই থাকতে চাইছে! কিন্তু রাস্তা আটকে যাওয়ার জন্য পেছনের গাড়ি যেই হর্ন দিলো, কিছুটা এগিয়ে গাড়ি রাখার কথা, তাহ না করে সোজা গাড়ি চালিয়ে হেইডিকে না নিয়েই বাড়ি ফিরে আসে। ইগো দেবতা জিন্দাবাদ! যেই দেখল হেইডি ঝুঁকেছে ওর দিকে, ব্যাস দূরে সরিয়ে দিল। যে কিনা এতদিন ধরে হেইডির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল!

হেইডির মত একজন কিন্তু সেই এড্রিয়ানের মেয়ে বন্ধুর মত নয় যে বেছে শুধুই সুন্দরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। কিছু ছাড় দেয়। সেই কবির কথায় যাকে বলে,

“You told me again you preferred handsome men
But for me you would make an exception”

এই পদ খেয়ে কী রকম লেগেছে বলতে গিয়ে যখন গোটা গল্পটাই বলে ফেলেছি তখন শেষটুকু বাদ দিয়ে মহান সাজার মানে হয় না। সিনেমাটা আর যাই হোক থ্রিলার তো নয়। একটা মন ভালো খারাপ করা সময় কাটানো মাত্র। এড্রিয়ান বাড়ি ফিরে এসেই পরের ফ্লাইটে লন্ডনে ফিরে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যায়। এক থাকার নাটক শেষ। আমার সাথেও হয়েছে। হেইডি না! কিন্তু পাহাড়ে একা একা বসে থাকব এইসব ভেবে শহরে ফ্যান্টাসি বুনেছি কিন্তু যেই ওখানে সত্যি গিয়ে পৌঁছেছি, দেখেছি কী ছোট দিন এদের! বিকেল হলেই সব শেষ। ভাবি কাজ ছাড়া দিন বড় মনে হবে, হয় উল্টোটা!

দুম করে এখানে শেষ হয়ে যাবে আমি ভাবি নি। জানতাম দেড় ঘন্টার সিনেমা। মাঝখানে খুব খাই খাই করছিল কিন্তু উঠতে পারছিলাম না। সিনেমায় আটকে গেছিলাম। কিছু না খেয়েই শেষ হয়ে যাওয়ার পর একটা বরফ ছানাবড়া বের করে কেটে কেটে খাওয়া গেল। খেতে খেতে ভাবছিলাম হেইডির সাথে যদি একদিন দেখা হত। কি বলতাম?

এই সিনেমাটা অদ্ভুত। মানে সেই “দুপুরের খামোখা খেয়াল” গানটা শুনে কী হয় ভেতরে সেটা কি সোজা ভাবে বলা যায়? ভালো লাগে এটা জানি আবার খারাপও লাগে এটা মানি। হেইডি কে দারুন লাগে। শুধু দেখতে না। ধেড়ে লোকদুটোকে না চাইতেই খাবি খাওয়ানো তো কম ব্যাপার না। ভালো লেগেছে কিভাবে ইগো দেবতা এড্রিয়ানের উঠোন বেঁকা থেকে শুরু করে শেষে গিয়ে আঙ্গুর ফল টক মনে হয়েছিল।

এই সব ভাবতে ভাবতে মনে হল কোনোদিন ক্যাফে খুললে একটা ডিশ বানাবো। চিনি ছাড়া পুরু ক্ষীরের একটা স্তর বাটির ভেতর। তার ওপর চার খানা বরফ জমা ছানাবড়া। ওপরে হালকা বরফ ঘন ছানাবড়ার রস আর তার ওপর আলমন্ড বাদাম স্লাইস করে। একশো টাকায় এটা দিলে আমি ভগবান হয়ে যাব। আসলে ঠিক এরকমই আরাম পেলাম এই দ্বিতীয় পদ খেয়ে। খানিক বিশেষণের অভাব বোধ হওয়াতে ডিশ বানিয়ে ফেললাম।

তিন নম্বরটা খাওয়ার আগে অনেকটা গ্যাপ যা প্রয়োজন ছিল, সেটা পেয়ে গেছি কাল। তাই আজ হতেই পারে!

নেক্সট লাও!

--

--

WhatsOddNWhatsNod

A bi-lingual blog for the rare nods in the sea of overwhelming odds.